No Comments

কিভাবে Pickaboo অনলাইন ইলেকট্রনিক্স শপিং-এ তৈরি করেছে গ্রাহকের আস্থা

বাংলাদেশে অনলাইন ইলেকট্রনিক্স কেনাকাটার ক্ষেত্রে Pickaboo এখন একটি বিশ্বস্ত নাম। শীতের সিজনে প্রতিদিন ২০০+ এয়ার কন্ডিশনার বিক্রি করছে Pickaboo। শুধু এয়ার কন্ডিশনার নয়, তাদের অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স সেল মিলিয়ে গ্রাহকরা বছরে প্রচুর টাকা সাশ্রয় করছেন।
Pickaboo-এর সাফল্য রহস্য? সরল কিন্তু শক্তিশালী: গ্রাহকের মূল সমস্যা সমাধান করা। গ্রাহকের আস্থা, স্বচ্ছতা, এবং সুবিধাজনক সেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে তারা এই সাফল্য অর্জন করেছে। Pickaboo শুধু পণ্য বিক্রি করছে না, বাজারের দামের মানদণ্ডই বদলে দিচ্ছে।আসুন দেখে নিই কিভাবে Pickaboo গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করেছে।

 

১. স্বচ্ছ মূল্য ও সহজ তুলনা- বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স বাজারে আগে এয়ার কন্ডিশনার ৭০,০০০ টাকার কমে পাওয়া যেত না। বাজারে স্বচ্ছ দামের অভাবের কারণে এমনটা চলছিল। Pickaboo এবং অন্যান্য ই-কমার্স বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স বাজারে দামের নতুন মানদণ্ড তৈরি করেছে। পরিমাণে পণ্য কেনা আর দক্ষ অপারেশনের কারণে তারা একই এসি ৫২,০০০ টাকায় কিনে ৫৭-৫৮ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারে-লাভ রেখেই। ফলে অফলাইন দোকানগুলোও বাধ্য হয় দাম কমাতে। এই সরল কৌশলই Pickaboo-কে শুধু লাভজনক করেনি, বরং পুরো বাজারের দাম নির্ধারণের নিয়মটাই বদলে দিয়েছে।

২.ফোকাস যা স্কেল আনতে সাহায্য করেছে- অনেক ই-কমার্স কোম্পানির থেকে Pickaboo আলাদা কারণ তারা একটি বিশেষ ক্ষেত্রে ফোকাস করেছে। অন্যরা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে কাজ ছড়িয়ে দেয়, আর Pickaboo পুরোপুরি কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স, মোবাইল এবং গ্যাজেটে মনোনিবেশ করেছে।

ফোকাসের কারণে তারা পণ্যের স্পেসিফিকেশন, ওয়ারেন্টি এবং টেকনিক্যাল সাপোর্টে গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছে। এছাড়া, সাপ্লায়ার সম্পর্ক ও বড় পরিমাণে ক্রয় করার সুযোগ পেয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদী প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা তৈরি করে।

৩.গ্রাহক আপগ্রেডের ধারা- Pickaboo-র বাজার কৌশল দেখায় তারা উন্নয়নশীল বাজারে গ্রাহকের আচরণকে গভীরভাবে বোঝে। কোম্পানির লক্ষ্য পুরো ১৮ কোটি জনগণের দিকে নয়, বরং প্রতি বছর প্রায় ৩ মিলিয়ন আপগ্রেডার বা নতুন ইলেকট্রনিক্স ক্রেতা।

যেই গ্রাহকরা সম্পূর্ণ অনলাইন ব্যবহারকারী, শহুরে জীবনধারার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া, এবং ঘরে বসে উন্নতমানের পণ্য কিনতে আগ্রহী। তারা শুধুমাত্র কম দামের প্রতি মনোযোগ দেয় না, বরং মূল্য, সুবিধা এবং গুণগত মানকেও অগ্রাধিকার দেয়।Pickaboo এই আচরণকে ভিত্তি করে ইনভেন্টরি পরিকল্পনা, মার্কেটিং কৌশল এবং পণ্যের নির্বাচন পরিচালনা করে।

সংক্ষেপে, Pickaboo নতুন চাহিদা তৈরি করছে না, বরং প্রয়োজনীয় আপগ্রেড চক্রকে সঠিক মূল্য এবং সুবিধার মাধ্যমে কার্যকরভাবে ধরছে।

৪. ভলিউমকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার-Pickaboo-এর লাভজনকতার মডেল বোঝা যায় তাদের এয়ার কন্ডিশনার বিক্রির ভলিউম দেখে। পিক সিজনে প্রতিদিন ২০০+ ইউনিট বিক্রি কেবল impressive নয়, এটি দেখায় ভিন্ন ধরনের মার্জিন কৌশল।

অন্যান্য রিটেইলার সাধারণত প্রিমিয়াম পজিশনিং বা ভ্যালু-অ্যাডেড সার্ভিসের মাধ্যমে মার্জিন বাড়ায়। Pickaboo ভলিউম ক্রয় এবং দ্রুত ইনভেন্টরি ঘূর্ণনের মাধ্যমে মার্জিন বাড়ায়।

হাজার হাজার এয়ার কন্ডিশনার ক্রয় করলে সাপ্লায়াররা এমন দাম দেয় যা ছোট দোকান পায় না। এর ফলে একটি ভলিউম-ভিত্তিক চক্র তৈরি হয়, যেমন, বড় ক্রয়-ভালো দাম-আরও বেশি বিক্রি- আরও ভালো ক্রয় শর্ত।এটি করার জন্য প্রয়োজন উচ্চ কর্মধন, শক্তিশালী লজিস্টিকস, সঠিক চাহিদা পূর্বাভাস এবং Supplier সম্পর্ক।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এই কৌশল গ্রাহকের সুবিধার সঙ্গে কোম্পানির স্বার্থকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে। Pickaboo গ্রাহককে সাশ্রয় দেয় এবং একই সঙ্গে স্থায়ী প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা তৈরি করে।

৫. সার্ভিস ইন্টিগ্রেশন কৌশল-Pickaboo সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইন-হাউস সার্ভিস ব্যবস্থা তৈরি করার, যাতে গ্রাহকরা সেটআপ, ক্রয়ের পর সেবা এবং ডেলিভারির জন্য সরাসরি নির্ভর করতে পারেন।এটি ইলেকট্রনিক্স রিটেইলের বড় চ্যালেঞ্জ সমাধান করে। ক্রয়ের পরের সেবা প্রায়ই দীর্ঘমেয়াদী গ্রাহক সম্পর্ক নির্ধারণ করে। Pickaboo-র ইনস্টলেশন সার্ভিস এবং নিজস্ব ডেলিভারি ফ্লিট গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা উন্নত করেছে, নতুন আয় উৎস তৈরি করেছে এবং ম্যানুফ্যাকচারারদের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করেছে। এই কৌশল দেখায়, দাম এবং নির্ভরযোগ্য সেবার সমন্বয় গ্রাহকের আনুগত্য তৈরি করে, যা শুধু লেনদেনের সম্পর্কের বাইরে যায়।

 

Pickaboo-র অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে বাজারে প্রবেশের সময় নির্বাচন ও পরিচালনাগত শৃঙ্খলা প্রায়ই উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক মডেল বা প্রচুর অর্থায়নের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ আধুনিকায়িত হচ্ছে এবং ভোক্তারা যখন তাদের ইলেকট্রনিক্স আপগ্রেড করছে, তখন কোম্পানির জন্য সেই সুযোগগুলো সতর্কভাবে কাজে লাগিয়ে লাভজনক হওয়ার পথ তৈরি হচ্ছে।

চ্যালেঞ্জ হবে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা বজায় রাখা, যখন বাজার আরও বড় হবে এবং অধিক মূলধনসম্পন্ন বড় প্রতিযোগীরা প্রবেশ করতে পারে।তবে, বাজারে মূল্যমানের মানদণ্ড তৈরি করা এবং শক্তিশালী প্রস্তুতকারক সম্পর্ক স্থাপনে পিকাবুর প্রাথমিক সাফল্য ইঙ্গিত দেয় যে তারা নিজেদের পরিচালন ক্ষমতার বাইরে আরও বিস্তৃত প্রতিরক্ষা গড়ে তুলেছে।

উদীয়মান বাজারের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের জন্য শিক্ষা স্পষ্ট-কখনও কখনও সবচেয়ে কার্যকর কৌশল হলো মৌলিক নীতিগুলোকে অসাধারণভাবে বাস্তবায়ন করা।

উদ্ভাবন ব্যবসায়িক মডেলে নয়, বরং বাস্তবায়নের গুণমান এবং বাজার বোঝার গভীরতায় নিহিত, যা সাধারণ পদ্ধতি থেকেও অসাধারণ ফলাফল এনে দিতে পারে।

Tags: , , , ,

More Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed